রিয়েলমি ১৫ সিরিজ: ৭০০০mAh ব্যাটারি ও IP69 রেটিং নিয়ে ৩টি নতুন ৫জি ফোন এলো
Realme 15 Series Price: 7000mAh Battery, IP69 & Review
Realme 15 series price in Bangladesh: রিয়েলমি বাংলাদেশের বাজারে তাদের নতুন ‘ফ্ল্যাগশিপ কিলার’ রিয়েলমি ১৫ সিরিজ (Realme 15 series) এনেছে। আর স্পেক-শিট দেখলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য— ৭০০০mAh ব্যাটারি, ১৪৪Hz ডিসপ্লে, এমনকি IP69 রেটিং! কিন্তু একজন সমালোচক হিসেবে আমার কাজ হলো এই হাইপের পেছনে খতিয়ে দেখা। এই বিশাল ব্যাটারির জন্য ফোনটি কি পকেটে রাখা ‘ইট’ হয়ে যাবে? ১৪৪Hz ডিসপ্লে কি আসলেই দরকার, নাকি ব্যাটারি শেষ করার নতুন কৌশল? আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন— Realme 15 series price in Bangladesh কি এই ফিচারগুলোর জন্য যৌক্তিক? চলুন, রিয়েলমির এই নতুন তিনটি ফোনের (১৫, ১৫ প্রো, ১৫টি) প্রতিটি ফিচার কাটাছেঁড়া করে দেখি।
Realme 15 series price in Bangladesh
এই প্রতিবেদনে যা থাকছে
- রিয়েলমি ১৫ সিরিজের তিনটি ফোনের দাম।
- ৭০০০mAh ব্যাটারি এবং ফাস্ট চার্জিং সুবিধা।
- ১৪৪Hz ডিসপ্লে এবং গেমিং পারফরম্যান্স।
- IP69 ওয়াটার রেজিস্ট্যান্স এবং কুলিং টেকনোলজি।
- এআই ক্যামেরা এবং অন্যান্য প্রিমিয়াম ফিচার।
রিয়েলমি ১৫ সিরিজের দাম কি ঠিক আছে? (Is the price justified?)
যেকোনো গ্যাজেট পর্যালোচনার শুরুতেই আসে এর দাম। রিয়েলমি বাংলাদেশ তিনটি মডেলের দাম ঘোষণা করেছে:
- রিয়েলমি ১৫টি ফাইভ–জি: ৩২,৯৯৯ টাকা
- রিয়েলমি ১৫ ফাইভ–জি: ৪৪,৯৯৯ টাকা
- রিয়েলমি ১৫ প্রো ফাইভ–জি: ৫৯,৯৯৯ টাকা
বিশ্লেষণ: Realme 15T 5G price (প্রায় ৩৩ হাজার টাকা) এই সেগমেন্টে বেশ প্রতিযোগী। কিন্তু Realme 15 Pro 5G দাম প্রায় ৬০,০০০ টাকা, যা ফ্ল্যাগশিপ সেগমেন্টের কাছাকাছি। এই দামে ব্যবহারকারীরা শুধু কাগুজে স্পেকস চায় না, তারা একটি প্রিমিয়াম ইন-হ্যান্ড ফিল, সময়মতো সফটওয়্যার আপডেট এবং নির্ভরযোগ্য ক্যামেরা পারফরম্যান্সও আশা করে। রিয়েলমি কি এই দামে স্যামসাং বা গুগলের মতো ব্র্যান্ডের সাথে পাল্লা দিতে পারবে? তা সময়ই বলবে।
৭০০০mAh ব্যাটারি এবং ১৪৪Hz ডিসপ্লে কি একটি ভালো সমন্বয়?
রিয়েলমির বিজ্ঞপ্তিতে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এর ৭০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারির মোবাইল সুবিধা। এটি নিঃসন্দেহে অসাধারণ। এর সাথে ৬০ থেকে ৮০ ওয়াটের ফাস্ট চার্জিং থাকায় চার্জ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
খুতখুতে রিভিউয়ারের দৃষ্টিভঙ্গি: ৭০০০mAh ব্যাটারি মানেই একটি আপস। রিয়েলমি বিজ্ঞপ্তিতে ফোনগুলোর ওজন বা পুরুত্বের (thickness) কথা উল্লেখ করেনি, যা একটি খটকার বিষয়। যদি ফোনটি ২৫০ গ্রামের বেশি ভারী এবং ১০ মিমি-এর বেশি পুরু হয়, তবে এটি দৈনন্দিন ব্যবহারে, বিশেষ করে এক হাতে ব্যবহারে, খুবই কষ্টকর হবে। এটি ফোন কম, পাওয়ার ব্যাংক বেশি মনে হতে পারে।
এর সাথে যুক্ত হয়েছে 144Hz refresh rate phone ডিসপ্লে। গেমারদের জন্য এটি দারুণ, কিন্তু প্রশ্ন হলো— এটি কি LTPO প্যানেল? যদি এটি একটি ডাইনামিক রিফ্রেশ রেট প্যানেল না হয়, তবে ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম স্ক্রল করার সময়ও এটি ১৪৪ হার্টজে চলবে, যা ৭০০০mAh ব্যাটারিকেও দ্রুত নিঃশেষ করে ফেলবে। একটি বিশাল ব্যাটারি দিয়ে আরেকটি ব্যাটারি-খেকো ফিচারের ভারসাম্য আনার চেষ্টা মনে হচ্ছে।
IP69 রেটিং কি শুধুই মার্কেটিং গিমিক? এর বাস্তব প্রয়োজনীয়তা কী?
এখানেই রিয়েলমি সবচেয়ে বড় চমক দিয়েছে। আমরা সাধারণত IP68 রেটিং দেখে অভ্যস্ত (পানিতে ৩০ মিনিট পর্যন্ত সুরক্ষিত)। কিন্তু IP69 ওয়াটার রেজিস্ট্যান্স ফোন মানে এটি উচ্চ-চাপ এবং উচ্চ-তাপমাত্রার ওয়াটার জেট সহ্য করতে পারে।
এটি একটি অবিশ্বাস্য ইঞ্জিনিয়ারিং অর্জন। এর মানে হলো আপনি ফোনটি নিয়ে ভারী বর্ষায় বাইক চালাতে পারবেন, ধুলাবালিতে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু IP69 রেটিং মূলত ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিভাইসের জন্য ডিজাইন করা। বাস্তব জীবনে কয়জন ব্যবহারকারী তাদের ফোন উচ্চ-চাপের গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করেন? আমার সন্দেহ, এটি একটি মার্কেটিং গিমিক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি— এমন একটি সমস্যার সমাধান যা সাধারণ ব্যবহারকারীর কখনোই ছিল না। তবে হ্যাঁ, এর ফলে ফোনটি যে কোনো ফোনের চেয়ে বেশি টেকসই হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
রিয়েলমির ‘AI ক্যামেরা’ কি আসলেও ভালো ছবি তোলে?
রিয়েলমি দাবি করেছে, ফোনগুলোতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিনির্ভর ক্যামেরা থাকায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভালো মানের ছবি তোলা যায়।
“AI ক্যামেরা” শব্দটি এখন সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত একটি মার্কেটিং শব্দ। রিয়েলমির বিজ্ঞপ্তিতে ক্যামেরার মেগাপিক্সেল, সেন্সরের আকার বা অ্যাপারচার সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দেওয়া হয়নি। এটি কি আসলেও উন্নত কম্পিউটেশনাল ফটোগ্রাফি, নাকি শুধু কালার স্যাচুরেশন বাড়িয়ে দেওয়া একটি ফিল্টার? ‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভালো ছবি’ একটি আপেক্ষিক কথা। একটি AI ক্যামেরা মোবাইল হিসেবে এর ছবি যদি ওভার-শার্পড বা অবাস্তব রঙের হয়, তবে তা পেশাদার ব্যবহারকারীদের সন্তুষ্ট করতে পারবে না। সেন্সর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য না জানা পর্যন্ত, এই ‘AI ক্যামেরা’-কে আমি সন্দেহের চোখেই দেখছি।
কাগজে-কলমে, রিয়েলমি ১৫ সিরিজ একটি ‘বিস্ট’ এবং স্পেসিফিকেশনের খেলায় অন্যসব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। ৭০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারির মোবাইল এবং IP69 রেটিং এই সেগমেন্টে অন্য কেউ দিচ্ছে না।
কিন্তু একজন সচেতন ক্রেতা হিসেবে আপনাকে হাইপের বাইরেও দেখতে হবে। এই ফোনগুলো নিঃসন্দেহে ভারী এবং বেশ মোটা হবে। ১৪৪Hz ডিসপ্লের বাস্তব ব্যাটারি পারফরম্যান্স পরীক্ষা সাপেক্ষ। এবং ‘AI ক্যামেরা’ একটি অস্পষ্ট দাবি। আপনি যদি শুধু সেরা স্পেকস চান এবং ওজন ও পুরুত্বের সাথে আপস করতে রাজি থাকেন, তবে Realme 15 Pro 5G আপনার জন্য হতে পারে। কিন্তু সফটওয়্যার এবং ক্যামেরার বাস্তব পারফরম্যান্স না দেখে ৬০,০০০ টাকা খরচ করা একটি বড় বাজি।
আরও পড়ুন: কম দামে ফাইভ-জি! ৬০০০mAh ব্যাটারি ও ১২০Hz ডিসপ্লে নিয়ে এলো টেকনো স্পার্ক ৪০