ইসলামী ব্যাংকের ২ পদে দেড় লাখ আবেদন: পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগের যুগ শেষ?
Islami Bank Recruitment 2025: 1.5 Lakh Apply for 2 Posts, Exam on Nov 1
ইসলামী ব্যাংক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৫: ইসলামী ব্যাংকের (Islami Bank Recruitment) ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার পদের জন্য ১.৪৬ লাখ আবেদন জমা পড়েছে। পরীক্ষা ১ নভেম্বর। এস আলম যুগের পর নতুন ইসলামী ব্যাংক নিয়োগ প্রক্রিয়া জানুন।
ইসলামী ব্যাংক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৫
বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংকে দীর্ঘদিন পর উন্মুক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিকে কেন্দ্র করে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে বিপুল সাড়া পড়েছে। ব্যাংকটির দুটি প্রারম্ভিক পর্যায়ের পদের জন্য প্রায় দেড় লাখ আবেদন জমা পড়েছে। এই ঘটনাটিকে ব্যাংকটির বিতর্কিত নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে সরে আসার প্রথম বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার’ এবং ‘ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার (ক্যাশ)’—এই দুই পদের জন্য মোট ১ লাখ ৪৬ হাজার শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন। আগামী ১ নভেম্বর এই দুই পদে নিয়োগের জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
সাড়ে ৩ হাজার পদের বিপরীতে দেড় লাখ আবেদন
ইসলামী ব্যাংক কতজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেবে, তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ না করলেও, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে এই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এই বিপুল সংখ্যক নিয়োগ একটি ধাপে নয়, বরং কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন করা হবে।
দীর্ঘদিন পর ব্যাংকটি বড় ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ায় চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে এই ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে। তবে এই আগ্রহের পেছনে আরও বড় কারণ রয়েছে ব্যাংকটির অতীতের নিয়োগ সংক্রান্ত বিতর্ক।
কেন এই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি গুরুত্বপূর্ণ?
এই Islami Bank Recruitment প্রক্রিয়াটি দুটি কারণে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমত, এটি একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এটি ব্যাংকটির বিতর্কিত অধ্যায় শেষে একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এস আলম গ্রুপের সময়ের বিতর্কিত নিয়োগ
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ আট বছর ইসলামী ব্যাংক চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল, যা নিয়ে আর্থিক খাতে ব্যাপক সমালোচনা হয়। ওই সময়ে ব্যাংকটির প্রায় অর্ধেক টাকা একাই বের করে নেয় গ্রুপটি, যা এখন পর্যন্ত আদায় হচ্ছে না।
সবচেয়ে সমালোচিত দিকটি ছিল জনবল নিয়োগ। এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণের সময়ে ব্যাংকটিতে প্রায় ১০ হাজার ৮৩৪ জন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, কোনো ধরনের নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াই এই বিশাল সংখ্যক কর্মীকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তথ্য অনুযায়ী, এস আলমের সময়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের মধ্যে শুধু চট্টগ্রাম জেলার কর্মীই ছিলেন ৭ হাজার ২২৪ জন। এই সংখ্যার মধ্যে আবার এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের নিজ উপজেলা পটিয়ার বাসিন্দাই ছিলেন ৪ হাজার ৫২৪ জন। কোনো ধরনের নিয়মনীতি ছাড়া নিয়োগ পাওয়া এই কর্মীদের নিয়েই ব্যাংকটি পরবর্তী সময়ে বেকায়দায় পড়ে।
পুনর্গঠন এবং ৪ হাজার কর্মী ছাঁটাই
গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এস আলম গ্রুপ ও তাদের ঘনিষ্ঠ ব্যাংকটির শীর্ষ কর্মকর্তারা পালিয়ে যান। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করে এবং ব্যাংকটির দায়িত্ব নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োজিত স্বতন্ত্র পরিচালকেরা।
পর্ষদ পুনর্গঠনের পর ব্যাংকটি থেকে প্রায় চার হাজার কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই পরীক্ষা ছাড়া নিয়োগ পেয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়।
ব্যাংকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও বক্তব্য
এই ৪ হাজার কর্মকর্তার পদ শূন্য হওয়ায় এবং ব্যাংকিং কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে ইসলামী ব্যাংক নতুন করে আবার প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে জনবল নিয়োগের পথে হাঁটছে।
জানা গেছে, এই Islami Bank Recruitment শুধু প্রারম্ভিক পর্যায়েই সীমাবদ্ধ থাকবে না। ব্যাংকটি নতুন করে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাসহ আরও একাধিক শূন্য পদে নিয়োগের পরিকল্পনা করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) এম কামাল উদ্দীন জসীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পুরোপুরি পেশাদারত্ব বজায় রেখে নিয়োগ দিচ্ছি। এ নিয়ে কারও কোনো আপত্তি উঠবে না। সামনে আরও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আসবে।’
সব মিলিয়ে, ইসলামী ব্যাংকের এই নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীর জন্য একটি বড় সুযোগ তৈরি করেছে এবং একই সাথে ব্যাংকটির স্বচ্ছতায় ফেরার চেষ্টাকে প্রতিফলিত করছে।
আরও পড়ুন: ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজেস-এ ড্রাইভার পদে চাকরি, কর্মস্থল: ঢাকা