এসএসসি ২০২৬: বাংলা, আইসিটি এবং ফিন্যান্সের প্রশ্ন কাঠামো ও নম্বর বিভাজনে বড় পরিবর্তন! জানুন বিস্তারিত

The NCTB has announced significant changes to the question patterns for the 2026 SSC examinations. Here's a detailed breakdown for students.

0

এসএসসি পরীক্ষা ২০২৬: ২০২৬ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খবর সামনে এসেছে। পরীক্ষার প্রস্তুতির কৌশল নির্ধারণে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে এমন কিছু পরিবর্তন এনেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বাংলা ২য় পত্র, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) এবং ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং—এই তিনটি বিষয়ের প্রশ্ন কাঠামো এবং নম্বর বিভাজনে আনা হয়েছে উল্লেখযোগ্য সংশোধন।

এসএসসি পরীক্ষা ২০২৬

গত ৫ অক্টোবর, বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে এক জরুরি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে নিশ্চয়ই অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—কী কী পরিবর্তন হলো? কেন হলো? এবং এর জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে? চলুন, এই বিষয়গুলো নিয়ে সহজ ও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক।

এই লেখায় যা জানবেন

  • কোন তিনটি বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ।
  • প্রতিটি বিষয়ের নতুন প্রশ্ন কাঠামো ও নম্বর বিভাজন।
  • কেন এই পরিবর্তন আনা হলো এবং এর প্রভাব কী হতে পারে।
  • এসএসসি পরীক্ষার্থী হিসেবে আপনার এখন কী করণীয়।

কারা এবং কেন এই পরিবর্তন আনলো?

এই পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি, যার সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। তবে প্রশ্ন কাঠামো এবং নম্বর বিভাজন সংশোধনের মূল কাজটি করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)

সাধারণত, শিক্ষার্থীদের শিখনফলকে আরও কার্যকরভাবে মূল্যায়ন করা, মুখস্থনির্ভরতা কমানো এবং প্রায়োগিক জ্ঞানের উপর জোর দেওয়ার লক্ষ্যেই এ ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। নতুন শিক্ষাক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পুরনো পদ্ধতির আধুনিকায়নও এর অন্যতম কারণ।

বিষয়ভিত্তিক পরিবর্তনগুলো বিস্তারিত জেনে নিন

সবচেয়ে বেশি কৌতুহল নিশ্চয়ই পরিবর্তনগুলো নিয়ে। চলুন, প্রতিটি বিষয় ধরে ধরে জেনে নিই ঠিক কী বদলেছে।

১. বাংলা দ্বিতীয় পত্র: অনুবাদ বাদ, জোর প্রতিবেদনে

বাংলা ২য় পত্রের রচনামূলক অংশে একটি বড় পরিবর্তন এসেছে। এতদিন শিক্ষার্থীদের অনুবাদের উত্তর করতে হতো, যার জন্য ১০ নম্বর বরাদ্দ ছিল।

  • পূর্বের নিয়ম: রচনামূলক অংশে “অনুবাদ” এর জন্য ১০ নম্বর ছিল।
  • নতুন নিয়ম: “অনুবাদ” অংশটি পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়েছে।
  • নম্বরের সমন্বয়: অনুবাদের জন্য বরাদ্দকৃত ১০ নম্বর এখন “সংবাদ প্রতিবেদন” রচনার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতিবেদন লেখার গুরুত্ব আগের চেয়ে বাড়ল।

প্রভাব: এখন শিক্ষার্থীদের সংবাদ প্রতিবেদন লেখার কৌশল আরও ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। অনুবাদের জন্য আলাদা প্রস্তুতি নেওয়ার আর প্রয়োজন নেই।

২. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT): সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন বাদ, বাড়লো MCQ-এর গুরুত্ব

আইসিটি বিষয়ে এতদিন সংক্ষিপ্ত-উত্তর প্রশ্ন এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্ন (MCQ)—দুই ধরনের প্রশ্নই থাকতো। নতুন নিয়মে এখানে একটি বড় সরলীকরণ করা হয়েছে।

  • পূর্বের নিয়ম: সংক্ষিপ্ত-উত্তর প্রশ্নের জন্য ১০ নম্বর এবং বহুনির্বাচনি (MCQ) প্রশ্নের জন্য ১৫ নম্বর বরাদ্দ ছিল।
  • নতুন নিয়ম: “সংক্ষিপ্ত-উত্তর প্রশ্ন” বিভাগটি সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া হয়েছে।
  • নম্বরের সমন্বয়: সংক্ষিপ্ত-উত্তর প্রশ্নের ১০ নম্বর সরাসরি বহুনির্বাচনি (MCQ) অংশের সাথে যোগ করা হয়েছে। ফলে এখন MCQ অংশে মোট নম্বর হবে ২৫ (১৫+১০)

প্রভাব: এর ফলে আইসিটি বিষয়ে ভালো নম্বর পেতে হলে পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি অধ্যায় খুটিয়ে পড়তে হবে। কারণ, ২৫টি বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য গভীর এবং পরিষ্কার ধারণা থাকা আবশ্যক।

৩. ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং: নতুন নিয়মে উত্তর দেওয়ার কৌশল

এই বিষয়টির পরিবর্তন কিছুটা কৌশলগত। এখানে প্রশ্ন বাদ দেওয়া হয়নি, বরং উত্তর দেওয়ার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে।

  • প্রশ্নের ধরন: মোট ১৫টি সংক্ষিপ্ত-উত্তর প্রশ্ন থাকবে।
    • ফিন্যান্স অংশ থেকে: ৮টি প্রশ্ন।
    • ব্যাংকিং অংশ থেকে: ৭টি প্রশ্ন।
  • উত্তর দেওয়ার নিয়ম: শিক্ষার্থীদের মোট ১০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
  • শর্ত: একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো—যেকোনো একটি বিভাগ (ফিন্যান্স বা ব্যাংকিং) থেকে ন্যূনতম ৪টি প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে

উদাহরণ: আপনি যদি ফিন্যান্স অংশ থেকে ৬টি প্রশ্নের উত্তর দেন, তবে ব্যাংকিং অংশ থেকে আপনাকে অবশ্যই ৪টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। আবার, আপনি যদি ব্যাংকিং অংশ থেকে ৫টি উত্তর দেন, তবে ফিন্যান্স অংশ থেকে ন্যূনতম ৪টি সহ মোট ৫টি উত্তর দিতে পারবেন। কোনো অংশই পুরোপুরি বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই।

প্রভাব: এই নিয়মের ফলে শিক্ষার্থীদের ফিন্যান্স এবং ব্যাংকিং উভয় অংশকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। শুধুমাত্র একটি অংশের উপর নির্ভর করে ভালো ফল করা কঠিন হবে।

শিক্ষার্থীদের জন্য এর প্রভাব ও করণীয়

এই পরিবর্তনগুলো ২০২৬ সালের পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা। এখন থেকেই নতুন মানবণ্টন মাথায় রেখে পড়াশোনার কৌশল সাজাতে হবে।

  • নির্বাচনি পরীক্ষার প্রস্তুতি: বিজ্ঞপ্তিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, দশম শ্রেণির নির্বাচনি পরীক্ষা নতুন এই কাঠামো অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। তাই স্কুলগুলোর মডেল টেস্ট ও নির্বাচনি পরীক্ষায় এই নতুন নিয়ম অনুসরণ করা হবে।
  • অনুশীলনে মনোযোগ দিন: özellikle বাংলা ২য় পত্রের প্রতিবেদন এবং আইসিটির বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উপর বেশি বেশি অনুশীলন করুন। ফিন্যান্স ও ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে উভয় অংশ থেকেই সমানতালে প্রস্তুতি নিন।
  • গাইডবই ও মডেল টেস্ট: বাজারের নতুন সংস্করণের গাইডবই ও মডেল টেস্টগুলো এই মানবণ্টন অনুসরণ করে প্রকাশিত হবে। সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করুন।
  • শিক্ষকদের সহায়তা নিন: কোনো বিষয়ে দ্বিধা থাকলে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের সাথে কথা বলে নতুন প্রশ্ন কাঠামো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিন।

পরীক্ষার নিয়মে যেকোনো পরিবর্তনই শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ তৈরি করে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এই পরিবর্তনগুলো একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়েই করা হয় এবং আগে থেকে জানার ফলে প্রস্তুতির জন্য সময় পাওয়া যায়। ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের উচিত আতঙ্কিত না হয়ে নতুন এই কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করা এবং সেই অনুযায়ী নিজেদের প্রস্তুত করা।

মূল শিক্ষা:

  • বাংলা ২য় পত্র: অনুবাদ নেই, সংবাদ প্রতিবেদনের নম্বর বেড়েছে।
  • আইসিটি: সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন নেই, মোট ২৫ নম্বরের বহুনির্বাচনি (MCQ) প্রশ্ন হবে।
  • ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং: মোট ১৫টি থেকে ১০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, তবে যেকোনো এক বিভাগ থেকে ন্যূনতম ৪টি উত্তর করা বাধ্যতামূলক।

আরও পড়ুন৪৯তম বিসিএস (বিশেষ) পরীক্ষা: স্বপ্নপূরণের চূড়ান্ত ধাপে পিএসসির গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা

SSC examinations 2026: এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সম্পর্কে আপনার বন্ধুদের জানাতে আর্টিকেলটি শেয়ার করুন। নতুন এই প্রশ্ন কাঠামো নিয়ে আপনার মতামত কী? কমেন্ট বক্সে আমাদের জানান।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)

প্রশ্ন ১: এই নতুন নিয়ম কোন এসএসসি ব্যাচের জন্য প্রযোজ্য? উত্তর: এই নিয়মটি শুধুমাত্র ২০২৬ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থী ব্যাচের জন্য প্রযোজ্য হবে।

প্রশ্ন ২: সিলেবাস কি কমানো বা বাড়ানো হয়েছে? উত্তর: না, বিজ্ঞপ্তিতে সিলেবাস পরিবর্তন নিয়ে কিছু বলা হয়নি। শুধুমাত্র তিনটি বিষয়ের প্রশ্ন কাঠামো ও নম্বর বিভাজন পরিবর্তন করা হয়েছে।

প্রশ্ন ৩: বাংলা ২য় পত্রের অনুবাদের ১০ নম্বর কোথায় গেল? উত্তর: ওই ১০ নম্বর সংবাদ প্রতিবেদন লেখার অংশের সাথে যুক্ত করা হয়েছে, যার ফলে প্রতিবেদনের গুরুত্ব বেড়েছে।

প্রশ্ন ৪: আইসিটি পরীক্ষায় এখন মোট কতটি বহুনির্বাচনি প্রশ্ন থাকবে? উত্তর: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের ১০ নম্বর MCQ-এর সাথে যুক্ত হওয়ায় আইসিটিতে মোট ২৫টি বহুনির্বাচনি প্রশ্ন থাকবে, প্রতিটির মান ১ করে মোট ২৫ নম্বর।

প্রশ্ন ৫: এই সিদ্ধান্ত কি চূড়ান্ত? উত্তর: হ্যাঁ, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত এবং এটি স্কুলগুলোর নির্বাচনি পরীক্ষা থেকেই কার্যকর হবে।

প্রশ্ন ৬: এই পরিবর্তনগুলো কবে থেকে কার্যকর হবে? উত্তর: এই পরিবর্তনগুলো ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার পাশাপাশি দশম শ্রেণির নির্বাচনি পরীক্ষা থেকেই কার্যকর হবে।

আরও পড়ুনকমিউনিকেশনস এ ক্যারিয়ার: বাজেট সংকট ও AI-এর যুগে টিকে থাকার কৌশল

Source প্রথম আলো

Leave A Reply

Your email address will not be published.